সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আমাকে ও আমার মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেয় রাজ্জাক। কালের খবর কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে কালভার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি। কালের খবর জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর
সিলেটে বেপরোয়া ছিনতাই সিন্ডিকেট

সিলেটে বেপরোয়া ছিনতাই সিন্ডিকেট

সিলেট প্রতিনিধি, কালের খবর  :

সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। প্রতিদিনই সিলেটের কোথাও না কোথাও ছিনতাই হচ্ছে। আবার ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ যাচ্ছে মানুষেরও। বিশেষ করে রাতের বেলা ছিনতাইয়ের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। এতে করে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেমে এসেছে। তবে পুলিশ বলছে- সিলেটে যাতে রাতের বেলা ছিনতাই না বাড়ে সে কারণে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। আর শাবির সাবেক ছাত্র মাহিদ খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই প্রকৃত আসামিরা গ্রেপ্তার হবে। ছিনতাইয়ের চিহ্নিত আস্তানা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা। পাশাপাশি উত্তর এলাকার বেশ কয়েকটি স্পটও ছিনতাই জোনে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ সুরমায় ছিনতাইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ে ভোরবেলা। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন সহ নগরীর প্রবেশ মুখ দক্ষিণ সুরমা। যারা বাইরে থেকে সিলেটে আসেন তাদের বেশির ভাগ যাত্রীই ভোরবেলা এসে গাড়িযোগে সিলেটের কদমতলী ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় নামেন। সেখান থেকে রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে গন্তব্যে যান। কিন্তু দক্ষিণ সুরমায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে যাত্রীরা। দক্ষিণ সুরমা কদমতলী। নতুন ব্রিজের মুখ। গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও ঢাকা বাইপাস সড়কের জংশন এটি। কদমতলী এলাকায় ছিনতাইয়ের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। ২০ জনের ছিনতাই গ্রুপ। ওই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় মাদকসেবীরা ও এক পুলিশের সোর্স। গাড়ি থেকে যাত্রী নেমে নতুন ব্রিজ হয়ে একটু দূরে গেলেই তাদের জাপটে ধরা হয়। ফাঁকা রাস্তা থাকায় নির্বিঘ্নে যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এরপর তারা ব্রিজের নিচ দিয়ে কলোনিতে চলে যায়। নতুন ব্রিজের উত্তর অংশে মেন্দিবাগ ও উপ-শহরের গলির মুখে রয়েছে আরেকটি ছিনতাই চক্র। ওদের হাতে বিশেষ করে বাস টার্মিনাল এলাকায় আগত যাত্রীরা ছিনতাইয়ের শিকার হন। দক্ষিণ সুরমার কদমতলী পয়েন্টে রয়েছে আরো একটি চক্র। ওই চক্র পাম্প ও বিভিন্ন মার্কেটের কর্ণারে অবস্থান করে। পাশে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তারা নির্বিঘ্নে ছিনতাই করে চলে যায়। তেমন ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার ভোররাতে। রাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিদ ঢাকা যাওয়ার পথে কদমতলীতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। ওখানে মাহিদের ঊরুতে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব ছিনতাই করা হয়। আর গুরুতর অবস্থায় মাহিদকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এখন সিলেট। মাহিদের খুনিদের গ্রেপ্তারে সিলেট পুলিশের ঘুম হারাম। কিন্তু গতকাল বিকাল পর্যন্ত এই খুনের ঘটনায় জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা হচ্ছে ছিনতাইকারীদের বড় আস্তানা। ওই টার্মিনাল এলাকার পেছনের কয়েকটি কলোনিতেই ছিনতাইকারীদের আস্তানা। এসব আস্তানা থেকে তারা ছিনতাই পরিচালনা করে। আর ছিনতাই করার পর তারা ওইসব কলোনিতে আশ্রয় নেয়। ভোরবেলা যাত্রীরা দূর-দূরান্ত থেকে নামলে তাদের ব্যাগ টেনে নেয়া সহ নানা ঘটনা ঘটে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। গাড়ির চালকরা জানিয়েছেন প্রায় প্রতিদিনই ২-৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে টার্মিনাল এলাকায়। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। কখনো কখনো পুলিশের সামনেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের গলির সামনে রয়েছে ঝাপটাপার্টির দৌরাত্ম্য। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে রেলের যাত্রীরা ভোরে এসে সিলেটে নামেন। রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার সময় গাড়ি থেকে ঝাপটা দিয়ে ব্যাগ, মোবাইল ছিনতাই করা হয়। আর ছিনতাই করে তারা রেলওয়ে স্টেশনের পেছনে থাকা কলোনির দিকে চলে যায়। এর বাইরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কীন ব্রিজের মুখ পর্যন্ত মাদকসেবীদের একটি ছিনতাই সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা বিভিন্ন টং দোকানের আড়ালে কিংবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। নিরিবিলি অবস্থায় যাত্রী পেলেই ঝাপটে সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের ওপর ছুরিকাঘাত করা হয়। দক্ষিণ সুরমার এসব ছিনতাইকারীদের বাস বিভিন্ন কলোনিতে। ওই কলোনিতে মাদক ও অসামাজিক কাজের আখড়া। নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয়রা। তারা নিয়মিত ফাঁড়ি পুলিশকে বখরা দেয় বলে পুলিশ ছিনতাই রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। সিলেটের কীন ব্রিজের সুরমা মার্কেট এলাকায় ছিনতাই পার্টি। পাশাপাশি ঝাপটা পার্টির দৌরাত্ম্যও বেশি। রাত নামলেই ছিনতাইকারীরা নেমে পড়ে রাস্তায়। আর দিনে ওরা ঝাপটা পার্টি হয়ে কাজ করে। ছিনতাই করে কখনো কখনো তারা কীন ব্রিজের নিচ দিয়ে পালিয়ে যায়। একটি গ্রুপের প্রধান আস্তানা সুরমা মার্কেটের ভেতরেই। ওই মার্কেটের ভেতরে তাদের আস্তানা রয়েছে। ছিনতাই করার মালামাল নিয়ে রাখা হয় ওখানে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, পুলিশ সহ তাদের সম্পর্কে অবগত থাকলেও কখনোই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হয় না। এর বাইরে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, আম্বরখানা, জিন্দাবাজার গার্লস স্কুলের সামন, ধোপাদিঘীরপাড়, সুবহানীঘাট, উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, শাহী ঈদগাহ, চৌহাট্টা, মেডিকেল, রিকাবীবাজার, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট ও বিশ্ববিদ্যালয় ফটক এলাকায় রয়েছে ছিনতাই পার্টি। সিলেটে ছিনতাইকারীদের হাতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন প্রতিদিনই বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কেউ না কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জালালাবাদ থানার পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এমনকি শহরের চিহ্নিত এলাকাগুলোতে ছিনতাই বন্ধে তারা কয়েক মাস আগে পুলিশের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সিলেট পুলিশের সোর্সদের শেল্টারে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মহানগর পুলিশ থেকে কয়েক মাস আগে একটি ছিনতাইয়ের তালিকা করা হয়েছিল। ওই তালিকা ছিল দুর্ধর্ষ থেকে ছিঁচকে ছিনতাইকারীরাও। রয়েছে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রও। তালিকা পুলিশের কাছে থাকলেও ছিনতাই বন্ধে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের তেমন গরজ নেই। খোদ ফাঁড়ি পুলিশের অনেক সদস্যই ছিনতাইকারীদের শেল্টারে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে প্রায় সময়। এদিকে মাহিদ খুনের ঘটনায় পুলিশ সক্রিয় থাকলেও এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন রাতে নগরীর ধোপাদিঘীর পাড়ে এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয়রা গণধোলাই দেয়। গণধোলাইয়ের এক পর্যায়ে ওই ছিনতাইকারী পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বেনু চন্দ চন্দ্র। তিনি গতকাল কালের খবরকে জানিয়েছেন, ওই ছিনতাইকারী আহত অবস্থায় পালিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্ন হাসপাতালে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আব্দুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, ছিনতাই রোধে সিলেটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। মাহিদ খুনের ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সুখবর মিলবে বলে জানান তিনি।

কালের খবর -/২৯/২/১৮

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com